স্কুলের লেখাপড়ায় এআইয়ের ব্যবহার: উপকার না ক্ষতি?

শিক্ষার্থীদের হোমওয়ার্ক কমানোই সমাধান? এআই ব্যবহারে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞরা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: প্রযুক্তির এ যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা বাড়ির কাজ ও পড়াশোনায় এআইয়ের সুবিধা নিচ্ছে। কিন্তু এই আধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে শিক্ষাবিদ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাই প্রতি ছয় প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের হোমওয়ার্ক বা কোর্সওয়ার্ক কমিয়ে আনা উচিত।

 

স্কুলের লেখাপড়ায় এআইয়ের ব্যবহার: উপকার না ক্ষতি?

 

এই তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক অনলাইন গবেষণা প্রতিষ্ঠান YouGov-এর একটি সর্বশেষ জরিপে, যা আয়োজন করেছে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট। জরিপে ৮৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কই বলেছে, শিক্ষার্থীদের জন্য এআই ব্যবহার ‘অগ্রহণযোগ্য’।

অন্যদিকে, কিছু মানুষ মনে করছেন, এআই ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীরা ব্যাকরণ ও বিরামচিহ্নে উন্নতি করতে পারে। যুক্তরাজ্যের দুই হাজার দুইশত একুশজনের ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ৪৬ শতাংশ মানুষ এআইকে ব্যাকরণ ও বিরামচিহ্নে সহায়ক মনে করেন, আর ৪৪ শতাংশ তা মানেন না। তবে মাত্র ১৬ শতাংশই মনে করেন, এআই অপব্যবহার ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের হোমওয়ার্ক কমানো উচিত।

যুক্তরাজ্যের ওসিআর পরীক্ষা বোর্ডের প্রধান নির্বাহী জিল ডাফি জানান, “এআইয়ের এই যুগে থাকলেও কোর্সওয়ার্কের গুরুত্ব কমানো সম্ভব নয়। এখন সময় এসেছে সঠিক এআই কৌশল প্রণয়নের, যাতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন আরও কার্যকর হয়।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে জিসিএসই পরীক্ষায় মোট মূল্যায়নের পরিমাণ কমানোর চিন্তা চলছে। গত মার্চে প্রকাশিত অন্তর্বর্তী রিপোর্টে এআই ব্যবহারের কারণে সিলেবাসভিত্তিক কাজের মান ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।”

এই পর্যালোচনার নেতৃত্বে থাকা শিক্ষা বিশেষজ্ঞ বেকি ফ্রান্সিস আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে তারা চূড়ান্ত সুপারিশ দেবেন যা এআই যুগে শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও কার্যকর করবে।

You also Like: ৪৪তম বিসিএসের প্রার্থীদের জন্য পিএসসির জরুরি নির্দেশনা

মিজ ডাফি বলেন, “স্কুলগুলোতে এআই ব্যবহারের প্রবণতা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং এটাকে থামানো সম্ভব নয়। তাই একটি জাতীয় সমন্বিত পরিকল্পনা জরুরি, যাতে প্রতিটি স্কুল প্রযুক্তির সুযোগ পায় এবং কেউ পিছিয়ে না পড়ে। পাশাপাশি অর্থায়নও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সবাই এআইয়ের সম্ভাবনায় বিশ্বাস রাখতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “এআই শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাইয়ের নতুন পথ দেখাতে পারে এবং পরীক্ষার চাপও কমাতে সহায়ক হবে।”

এছাড়া, YouGov-এর জুন মাসের আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের পাঁচ শিক্ষকের মধ্যে তিনজন কোর্সওয়ার্ক মূল্যায়নে এআই ব্যবহারের বিরুদ্ধে, যদিও ২৭ শতাংশ শিক্ষক এই ব্যবহারের পক্ষে রয়েছেন।

সুতরাং, এআই প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থায় সতর্কতারও প্রয়োজন, যাতে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শিখে ভবিষ্যতে সফল হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *