১১ জন চীনে গিয়ে শিখবেন ড্রোন চালানোর কৌশল

 

বাংলাদেশের যুবকরা এবার চীনে শেখার জন্য যাবে ড্রোন প্রোগ্রামিং!

রঙিন ড্রোন শোতে মুগ্ধ বাংলাদেশ

গত কিছু মাস ধরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত রঙিন ও জটিল ডিজাইনের ড্রোন শোগুলো দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই শোগুলোতে দেশের মহানায়করা ফুটে উঠেছে এবং ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রকৃত চেহারাও উদঘাটিত হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে মোট ছয়টি শো আয়োজন করা হয়েছে, যা চীনা দূতাবাসের সহযোগিতায় সম্পন্ন হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই চমকপ্রদ শোগুলো ডিজাইন করেছে শাংহাই ক্রোস্টারস কোম্পানি।

ড্রোন শোগুলো কেবল প্রযুক্তি নয়, বরং একটি শিল্পমাধ্যম হিসেবে দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সামাজিক বার্তা তুলে ধরেছে। প্রতিটি শোতে রঙিন আলো, সঙ্গীত এবং সুনিপুণ প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে গল্প বলার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

ড্রোন চালানোর কৌশল


চীনের সহায়তায় বাংলাদেশের যুবকদের প্রশিক্ষণ

বাংলাদেশের যুবকরা চীনের কাছ থেকে ড্রোন প্রোগ্রামিং শেখার সুযোগ পাচ্ছে। এটি একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, যা চীনা দূতাবাস এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ১১ জনকে নির্বাচন করা হয়েছে—নয়জন প্রশিক্ষণার্থী, একজন দলের নেতা এবং একজন কর্মকর্তা।

এই প্রশিক্ষণশালার অংশগ্রহণকারীরা ১৫ আগস্ট চীনে যাত্রা করবেন এবং ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরবেন। অর্থাৎ প্রায় চার সপ্তাহ তারা চীনে থেকে ড্রোন প্রোগ্রামিং শিখবেন, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নতুন মিডিয়া শিল্প ও প্রযুক্তির জগতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।


বিশেষ অনুষ্ঠান ও উদ্বোধনী বক্তব্য

আজ সকালে এই উপলক্ষে চীনা দূতাবাসে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকি, বাংলাদেশের প্রতি চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, বাংলাদেশের শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক আব্দুল হাই চঞ্চল, শাংহাই ক্রোস্টারস কোম্পানির ব্র্যান্ডিং বিভাগের পরিচালক ঝাং ইয়ান (অ্যামান্ডা) এবং চীনা দূতাবাসের অন্যান্য সদস্যরা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোস্তফা সারোয়ার ফারুকি বলেন,

“বাংলাদেশ ছয় মাসে ছয়টি ড্রোন শো উপভোগ করেছে। ড্রোন শো হলো প্রযুক্তি ও শিল্পের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ, যা গল্প বলার নতুন মাধ্যম। আমাদের যুব দল অনেক সময় ও শ্রম দিয়েছে প্রতিটি শো কিউরেট এবং স্ক্রিপ্ট করতে। তারা সবকিছু পরিকল্পনা করেছে, সংলাপ থেকে শুরু করে ছোটখাটো বিস্তারিত পর্যন্ত। আমরা ভাবলাম, ‘কেন আমরা আমাদের দেশে এটি করতে পারব না?'”

তিনি আরও বলেন,

“এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ধারণা এসেছে একেবারে এলোমেলোভাবে। ১৪ এপ্রিল একটি সফল শো শেষে চীনা বন্ধুদের সঙ্গে ডিনার চলাকালীন আমি রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনকে casually জিজ্ঞেস করি যে, চীনা দূতাবাস কি আমাদের কিছু উত্সাহী নতুন মিডিয়া শিল্পীদের চীনে পাঠাতে সাহায্য করতে পারে। কয়েক মিনিটের মধ্যে তারা সম্মত হয়েছেন। এখন তারা প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন, এবং আমি নিশ্চিত যে তাদের দেশে ফিরে আসার পর নতুন মিডিয়ার শিল্পদৃশ্যে এক নতুন প্রভাব দেখতে পাব।”


আরও সহযোগিতা – শিল্প ও সাংস্কৃতিক বিনিময়

চীনের সঙ্গে আরও একটি সহযোগিতার অংশ হিসেবে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ১৫ জনের একটি দল চীনে যাবে একটি শিল্প পুনঃস্থাপন প্রকল্পের জন্য। দেশে ফিরে এরা বাংলাদেশের শিল্প জগতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

ফারুকি বলেন,

“আমরা একসাথে হেরিটেজ এবং সঙ্গীত সংক্রান্ত নতুন প্রোগ্রামও চালু করতে যাচ্ছি। শিল্পকলা একাডেমির কঠোর পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ, যারা ছয় মাসে ৫০০ প্রার্থী থেকে প্রশিক্ষণার্থীদের নির্বাচন করেছে। এটি দেখায় আমাদের যুব সমাজে অসাধারণ প্রতিভা আছে, শুধু আমরা তাদের সঠিক সুযোগ দিতে হবে।”


চীনা রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য

বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন,

“ড্রোন প্রদর্শনী একটি উদীয়মান প্রযুক্তি, যা বিজ্ঞান, শিল্প এবং সৃজনশীলতার সমন্বয়। এ বছর চীন ও বাংলাদেশ যৌথভাবে বেশ কয়েকটি চমকপ্রদ প্রোগ্রাম আয়োজন করেছে, যা দৃষ্টিনন্দন ভিজ্যুয়াল উপস্থাপন করেছে। এই সহযোগিতা আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা দেখানোর পাশাপাশি দু’দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনও শক্তিশালী করছে।”


ড্রোনের ভবিষ্যত ও দেশীয় প্রয়োগ

প্রেস কনফারেন্সে ফারুকি আরও জানান, বাংলাদেশ এখনও নিজস্ব ড্রোন নেই। তবে সরকার বা বেসরকারি খাতের সহায়তায় ভবিষ্যতে দেশ ড্রোন প্রযুক্তি অর্জন করতে পারে। তিনি বলেন,

“প্রশিক্ষণার্থীরা দেশে ফিরে অন্তত দুই বছর আমাদের ড্রোন শোতে অবদান রাখবেন। পরিকল্পিত জুলাই মিউজিয়ামে প্রচুর নতুন মিডিয়া প্রদর্শনী হবে, যা আমাদের সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর পরিধি বাড়াবে।”

রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এ বিষয়ে বলেন,

“প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আমাদের সহযোগিতার অংশ। ড্রোন সরবরাহও সম্ভব ভবিষ্যতের একটি অংশ। আমরা বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহে প্রস্তুত। ড্রোন কেবল সাংস্কৃতিক কাজে নয়, কৃষিতেও ব্যবহার করা যাবে। কিছু দেশ বাংলাদেশে উৎপাদন লাইন চালু করার আগ্রহ দেখাচ্ছে। যদি বাংলাদেশ সম্মত হয়, আমরা এখানে ড্রোন উৎপাদন শুরু করতে পারি।”


ড্রোন শো: প্রযুক্তি ও শিল্পের সমন্বয়

ড্রোন শোগুলো কেবল প্রযুক্তিগত প্রদর্শনী নয়, এটি দেশের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক গল্প বলার একটি নতুন মাধ্যম। প্রতিটি প্রদর্শনীতে ড্রোনের উড়ন্ত লাইট, চিত্রনাট্য, সংলাপ এবং সঙ্গীতের সমন্বয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।

ফারুকি বলেন,

“প্রতিটি প্রদর্শনীর পিছনে যুবক দলের চিন্তাভাবনা ও সৃজনশীলতার প্রচেষ্টা রয়েছে। তারা শোয়ের প্রতিটি বিস্তারিত পরিকল্পনা করেছে—কোন সংলাপ ব্যবহার হবে, কোন মুহূর্তে কোন লাইট জ্বলে উঠবে—সবই নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে।”


সংশ্লিষ্ট প্রকল্প ও ভবিষ্যতের দিশা

শীঘ্রই চীনা সহযোগিতায় আরও অনেক সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত প্রকল্প শুরু হবে। এটি নতুন মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পক্ষেত্রে উদ্ভাবনী পরিবর্তন আনবে। ফারুকি বলেন,

“আমাদের লক্ষ্য শুধু প্রযুক্তি শেখা নয়, বরং দেশের শিল্প ও সংস্কৃতিকে নতুন মাত্রা দেওয়া।”

You also like: ভার্চুয়াল ল্যাব এ বড় চমক! প্রযুক্তিতে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের পড়াশোনা


সংক্ষেপে মূল বিষয়গুলো:

  • ড্রোন শো: ছয় মাসে ছয়টি রঙিন ও চমকপ্রদ শো অনুষ্ঠিত হয়েছে।
  • প্রশিক্ষণ: ১১ জন যুবক চীনে ড্রোন প্রোগ্রামিং শেখার জন্য যাচ্ছেন।
  • সময়কাল: ১৫ আগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর, মোট চার সপ্তাহ।
  • ভবিষ্যতের প্রভাব: দেশে ফিরে তারা নতুন মিডিয়া শিল্পে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবেন।
  • চীনের সহযোগিতা: ড্রোন সরবরাহ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার সম্ভাবনা আছে।
  • সংস্কৃতি ও শিল্পের সমন্বয়: শো ও ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলিতে প্রযুক্তি, শিল্প ও সাংস্কৃতিক গল্প একত্রিত হবে।

শেষ কথা

বাংলাদেশে ড্রোন শো কেবল একটি প্রযুক্তিগত প্রদর্শনী নয়, এটি দেশের যুব সমাজকে নতুন মিডিয়ার মাধ্যমে সৃজনশীল হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। চীনের সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ড্রোন সরবরাহ দেশকে নতুন প্রযুক্তি ও শিল্পের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই উদ্যোগ দেখাচ্ছে, শুধু দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, সাংস্কৃতিক ও শিল্প ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্থানও আন্তর্জাতিকভাবে দৃঢ় হচ্ছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *