প্রিমিয়ার লিগ সিইওর অনুরোধ: ম্যান সিটি মামলায় ধৈর্য ধরুন

 

ম্যান সিটি মামলায় ধৈর্যের আহ্বান! প্রিমিয়ার লিগ সিইওর সরাসরি জবাব সমালোচকদের প্রতি

রিচার্ড মাস্টার্সের অবস্থান – ধীর গতির মামলাতেও আস্থা রাখতে হবে

প্রিমিয়ার লিগের প্রধান নির্বাহী রিচার্ড মাস্টার্স বুধবার প্রকাশ্যে সমালোচনার জবাব দিয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির বহুল আলোচিত শৃঙ্খলাভঙ্গ মামলার ধীরগতির প্রক্রিয়া নিয়ে।
লিভারপুলে অনুষ্ঠিত প্রিমিয়ার লিগের মৌসুম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই মামলায় ১১৫টি অভিযোগ আছে, যা আর্থিক নিয়ম ভঙ্গের সাথে সম্পর্কিত। অভিযোগ গঠনের পর থেকেই পুরো বিষয়টি একটি স্বাধীন প্যানেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

প্রিমিয়ার লিগ


“আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই” – মাস্টার্সের ব্যাখ্যা

স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাস্টার্স স্পষ্ট ভাষায় বলেন,

“এটি মূলত একটি স্বাধীন বিচারিক সংস্থা। একবার অভিযোগ তুলে দেওয়া হলে, তারা পুরো প্রক্রিয়া ও সময়সূচি নিয়ন্ত্রণ করে। তারা শুনানি চালায়, রায় দেয়, আর আমরা কোনোভাবেই তাতে প্রভাব ফেলতে পারি না।”

তিনি আরও বলেন, এই মামলার রায় কবে আসবে, তা নিয়ে তিনি কোনো ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করবেন না। তবে তিনি স্বীকার করেন, দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চলা অনেকের কাছে হতাশাজনক।


ধৈর্যের বার্তা

মাস্টার্স বলেন,

“আমার হতাশা আসলে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাকে শুধু অপেক্ষা করতে হবে। আইনি প্রক্রিয়া কখনোই প্রত্যাশার চেয়ে কম সময় নেয় না। তাই ধৈর্য ধরতে হবে।”

তার মতে, আইনি প্রক্রিয়ার গতি যতই ধীর হোক না কেন, সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।


বিদেশে প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচ আয়োজন নিয়ে অবস্থান

লা লিগা সম্প্রতি স্পেনের ফুটবল ফেডারেশনের অনুমোদন পেয়েছে মায়ামিতে ভিয়ারিয়াল বনাম বার্সেলোনা ম্যাচ আয়োজনের জন্য। এই সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ফুটবলে বড় বিতর্ক তৈরি করেছে।

এ প্রসঙ্গে মাস্টার্স বলেন, প্রিমিয়ার লিগের ক্ষেত্রে বিতর্কিত “গেম ৩৯” ধারণা (অতিরিক্ত একটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ বিদেশে আয়োজন) এখনো আলোচনায় নেই। তিনি বলেন,

“ওই (লা লিগা) ম্যাচ নিয়ে এখনো অনেক ধাপ বাকি আছে, আদৌ হবে কি না তা নিশ্চিত নয়।”

মাস্টার্স মনে করিয়ে দেন, এক সময় প্রিমিয়ার লিগও বিদেশে ম্যাচ আয়োজনের চিন্তা করেছিল, কিন্তু তীব্র সমালোচনার মুখে তা বাদ দেওয়া হয়।

“আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বজুড়ে প্রিমিয়ার লিগকে আরও জনপ্রিয় করা। আমরা সেটা অন্য উপায়ে করতে পেরেছি।”


নতুন করে উঠে আসা প্রতিযোগিতার প্রশ্ন

সাম্প্রতিক মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসা দলগুলো দ্রুতই আবার অবনমিত হয়ে যাচ্ছে, যা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। গত মৌসুমে লেস্টার সিটি, ইপসউইচ টাউন ও সাউদাম্পটন মাত্র এক মৌসুম খেলে আবার চ্যাম্পিয়নশিপে নেমে গেছে।

এর আগের মৌসুমে একই ঘটনা ঘটেছিল লুটন টাউন, বার্নলি ও শেফিল্ড ইউনাইটেডের ক্ষেত্রে।

মাস্টার্স তবে মনে করিয়ে দেন, নটিংহাম ফরেস্ট, বোর্নমাউথ ও ফুলহ্যামের মতো উদাহরণও আছে, যারা প্রিমিয়ার লিগে উঠে এসে তিন বছর পরও টিকে আছে এবং ভালো পারফরম্যান্স করছে।


“প্রিমিয়ার লিগ আরও প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে”

মাস্টার্স বলেন,

“এটা কখনোই সহজ হবে না। প্রিমিয়ার লিগ ক্রমশ আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে। চ্যাম্পিয়নশিপও দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি ডিভিশন। আমরা চাই এটা সফল হোক, চাই নতুন নতুন ক্লাব উপরে উঠুক। তবে বিষয়টি আমাদের নজরে রাখতে হবে।”


নতুন ফুটবল রেগুলেটর – কবে শুরু হবে কাজ

মাস্টার্স নিশ্চিত করেছেন, নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে কার্যক্রম শুরু করবে। এটি হবে বিশ্বের মধ্যে প্রথম কোনো বড় ফুটবল জাতির জন্য এই ধরণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

তিনি বলেন,

“প্রিমিয়ার লিগ একটি বৈশ্বিক পরিবেশে কাজ করে। তাই আমাদের কিছু উদ্বেগ আছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই রেগুলেটর যেন শুরুতেই ধরে না নেয় যে ফুটবল এখানে কোনোভাবে ভেঙে পড়েছে।”

মাস্টার্স আরও যোগ করেন,

“সব সূচকই ইতিবাচক—পুরো ফুটবল কাঠামো, ইংল্যান্ডের পুরুষ ও নারী দল—সবখানেই ভালো অবস্থা। তাই রেগুলেটরের উচিত কেবল তখনই হস্তক্ষেপ করা, যখন তা সত্যিই জরুরি।”


নতুন মৌসুমের সূচনা

প্রিমিয়ার লিগের নতুন মৌসুম শুরু হবে শুক্রবার। উদ্বোধনী ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল মুখোমুখি হবে বোর্নমাউথের। এই ম্যাচ দিয়েই শুরু হবে দীর্ঘ নয় মাসের প্রতিযোগিতা, যেখানে শিরোপা লড়াই, অবনমন যুদ্ধ ও শীর্ষ চারে জায়গা পাওয়ার দৌড় সমান উত্তেজনাপূর্ণ হবে।

You also like: রিয়াল মাদ্রিদ ক্ষুব্ধ! মিয়ামিতে বার্সার লা লিগা ম্যাচ আটকাতে উয়েফা-ফিফাকে আহ্বান


সংক্ষেপে মূল বিষয়গুলো:

  • ম্যান সিটি মামলা: ১১৫টি অভিযোগ, স্বাধীন প্যানেলের হাতে, প্রিমিয়ার লিগের নিয়ন্ত্রণ নেই।
  • বিদেশে ম্যাচ আয়োজন: প্রিমিয়ার লিগের “গেম ৩৯” এখনো পরিকল্পনায় নেই, লা লিগার সিদ্ধান্তে প্রভাব নেই।
  • প্রমোশন-রেলিগেশন চ্যালেঞ্জ: কিছু দল দ্রুত অবনমিত হলেও, অন্যরা দীর্ঘমেয়াদে টিকে যাচ্ছে।
  • নতুন রেগুলেটর: অক্টোবর-নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করবে, বিশ্বের প্রথম বড় ফুটবল জাতির জন্য এই ধরণের সংস্থা।
  • নতুন মৌসুম: লিভারপুল বনাম বোর্নমাউথ দিয়ে সূচনা।

শেষ কথা

রিচার্ড মাস্টার্স স্পষ্ট করে দিয়েছেন—ম্যানচেস্টার সিটির মামলার গতি যত ধীরই হোক না কেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরাই একমাত্র পথ। একইসাথে, বিদেশে ম্যাচ আয়োজন ও নতুন রেগুলেটর নিয়ে তার অবস্থান দেখায় যে, প্রিমিয়ার লিগ এখন শুধু মাঠের লড়াই নয়, বরং পরিচালনাগত চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *