ধ্রুব জুরেলকে আউট করেই ম্যাচের রং বদলে দিলেন গাস অ্যাটকিনসন! ইংল্যান্ডের জয়ের বড় ইঙ্গিত ওভালে
ওভাল টেস্টের প্রথম দিনেই ধ্রুব জুরেলকে ফিরিয়ে হঠাৎ যেন বাজিমাত করে ফেললেন গাস অ্যাটকিনসন। একদিকে ভারতের ইনিংস কিছুটা গুছিয়ে উঠছিল, আর অন্যদিকে ইংল্যান্ড তখন খুঁজছিল একটা বড় ধাক্কার। আর সেই ধাক্কাটাই এনে দিলেন এই তরুণ পেসার। শুধু এক উইকেট নয়—ম্যাচের গতি-প্রকৃতিই যেন ঘুরিয়ে দিলেন অ্যাটকিনসন। তার এই ব্রেকথ্রু নিয়ে এখন আলোচনার ঝড় চারদিকে।
🎯 কী হয়েছিল: এক ওভারেই ছন্দ ভেঙে দিলেন অ্যাটকিনসন
ওভাল টেস্টের প্রথম দিন, ম্যাচের ৪৯তম ওভার। ভারতের স্কোর তখন ১৫৩ রানে ৫ উইকেট। উইকেটে ছিলেন ধ্রুব জুরেল ও করুণ নায়ার—দুজনই ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছিলেন। এই সময়েই আসে সেই মোক্ষম মুহূর্ত। পেসার গাস অ্যাটকিনসন একটা এলবিডব্লিউর আবেদন করেছিলেন, সেটা ডিআরএসে বাতিল হয়। কিন্তু পরের বলেই হিসাব চুকিয়ে দেন তিনি—একটা বাড়তি বাউন্সার, জুরেল হালকা ছোঁয়া দিয়ে বলটা স্লিপে পাঠান, আর দ্বিতীয় স্লিপে থাকা হ্যারি ব্রুক সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে ভুল করেননি।
জুরেল তখন ১৯ রানে ব্যাট করছিলেন। এই উইকেটটা শুধু একটি সংখ্যার নয়, ছিল প্রতিরোধের, আত্মবিশ্বাসের, আর ভারতের ইনিংসের সম্ভাবনার পতন।
🔍 কেন এই উইকেট এত গুরুত্বপূর্ণ?
১. ম্যাচের মোড় ঘোরানো উইকেট: জুরেল ফিরতেই ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ১৫৩/৬। অর্থাৎ, ভারতের মিডল অর্ডার ভেঙে পড়ে। ইনিংসের ভারসাম্য নষ্ট হয় এক লহমায়।
২. অ্যাটকিনসনের প্রত্যাবর্তন: মাসের পর মাস চোটে মাঠের বাইরে থাকা এই পেসার এই প্রথম বড় টেস্ট মঞ্চে ফিরে এলেন। আর ফিরেই দলকে এনে দিলেন সোনা ফলানো উইকেট। তার পেস ও বাউন্স ভারতের ব্যাটারদের বিপদে ফেলেছে শুরু থেকেই।
৩. ইংল্যান্ডের সঠিক কৌশল: ওভালের সবুজ উইকেট ও আকাশে হালকা মেঘ—এই দুই মিলিয়ে বোলারদের জন্য আদর্শ পরিবেশ। অ্যাটকিনসন তা পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগালেন। লেংথ বদলে, সিম মুভমেন্ট করে তিনি ভারতের ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করেন।
সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেনও বলেছেন, “পুরো বোলিং ইউনিট যতটা ধারাবাহিক হতে পারেনি, অ্যাটকিনসন সেই জায়গায় ছন্দ খুঁজে পেয়েছে। তার বলের গতি আর লাইন-লেন্থ ভারতীয় ব্যাটারদের সমস্যা তৈরি করেছে।”
You also like: এশিয়ান কাপে কঠিন প্রতিপক্ষ পেল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল
🧑🤝🧑 গাস অ্যাটকিনসন কে?
- সারে দলের হয়ে খেলা এই পেসার বেশ কিছুদিন ধরেই চোট-আঘাতে ভুগছিলেন। মূলত ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টিতে বেশি খেলেছেন। লাল বলের ক্রিকেটে ম্যাচ প্র্যাকটিস ছিল সীমিত। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরে এসে তার এই পারফরম্যান্স যেন নতুন করে তার জায়গা পাকা করে দিল।
- স্টুয়ার্ট ব্রডের মতে, অ্যাটকিনসনের জায়গা একেবারে প্রাপ্য ছিল। তার মতে, “জোফরা আর্চার ক্লান্ত আর চোটাক্রান্ত। তার জায়গায় অ্যাটকিনসন যেমন তরতাজা, তেমনি ভয়ংকর। এই উইকেটে ওর মতো একজনেরই দরকার ছিল।”
🏏 ম্যাচের প্রেক্ষাপট: শুরুতেই ভারত চাপে
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে এই ম্যাচে বেন স্টোকস ছিলেন না, তার বদলে অধিনায়কত্ব করেন অলি পোপ। আর তিনিই সাহস করে প্রথমে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, সেটা প্রমাণ হয়ে যায় দ্রুতই।
প্রথম সেশনে ভারতের ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল ও কে এল রাহুল—দুজনেই খুব দ্রুত ফিরে যান। মিডল অর্ডারে একটু লড়াই করেছিলেন সাই সুদর্শন ও রাহুল, কিন্তু রাহুল ফেরার পর ভারতীয় ইনিংস আবারও হোঁচট খায়।
লাঞ্চ পর্যন্ত ভারতের স্কোর ছিল ৭২/২। দ্বিতীয় সেশনে কিছুটা সময় টিকলেও, উইকেট হারানো থামেনি। করুণ নায়ার ও জুরেল কিছুটা জুটি গড়েন, কিন্তু তা খুব বেশি স্থায়ী হয়নি। দিনের শেষে স্কোর দাঁড়ায় ১৮৪/৬।
⚖️ বিশ্লেষকদের মতামত
- নাসের হুসেন বলেছেন, “ইংল্যান্ডের বোলিং ইউনিট কিছুটা ‘অ্যাভারেজ’ হলেও, অ্যাটকিনসনের আগমন সেই জায়গাটা কাভার করেছে। বিশেষ করে ক্রিস ওকসের সাথে ওর বোলিং কম্বিনেশন দারুণ হয়েছে।”
- স্টুয়ার্ট ব্রড বলছেন, “আর্চার বারবার চোট পেয়ে দলকে ভোগাচ্ছে। সেই জায়গায় অ্যাটকিনসনের মতো নতুন, ফিট ও ফ্রেশ পেসার একটা বড় স্বস্তি।”
🧭 কেন এই মুহূর্ত ভক্ত ও বিশ্লেষকদের নজর কাড়ছে?
- সিরিজ নির্ধারক টেস্ট: সিরিজ ২–২ তে থাকা অবস্থায়, পঞ্চম টেস্টটা কার্যত ফাইনাল। এমন ম্যাচে প্রতিটি উইকেট, প্রতিটি মুহূর্তের তাৎপর্য অনেক বেশি।
- দলের গভীরতা প্রমাণ: অ্যাটকিনসনের মতো খেলোয়াড় হুট করে এসে বড় মঞ্চে জ্বলে ওঠায় বোঝা যায়, ইংল্যান্ডের বেঞ্চ স্ট্রেংথ কতটা ভালো।
- পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন: ইংল্যান্ড এই ম্যাচে রিভিউ নেওয়া, বোলারদের ঘুরিয়ে ব্যবহার করা, ফিল্ডিং সাজানো—সব কিছুতে একদম পয়েন্টে। অ্যাটকিনসনের বলেও একবার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত বাতিল হলেও পরের বলেই উইকেট তুলে নেয়া সেই কৌশলের পরিণতি।
- প্রথম দিনেই দখল: ওভালে প্রথম দিনেই ইনিংসের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছে ইংল্যান্ড। টস জিতে বোলিং নেওয়ার পর সেটাকে যেভাবে কাজে লাগিয়েছে, তাতে ভারত এখন রীতিমতো চাপে।
✅ মূল কথা
গাস অ্যাটকিনসনের ওই একটি উইকেট যেন পুরো ম্যাচের গতি ঘুরিয়ে দিল। ধ্রুব জুরেল ছিলেন ভারতের ব্যাটিংয়ের শেষ ভরসা—তাকে ফিরিয়ে অ্যাটকিনসন শুধু একটি উইকেট নিলেন না, বরং ইংল্যান্ডের মোমেন্টাম ফিরে আনলেন। ইনজুরির পর এমন ফিরে আসা যে কোনও তরুণ পেসারের জন্যই অনুপ্রেরণা।
এই ম্যাচে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বোলিং কৌশল, মাঠের ব্যবহার, এবং খেলোয়াড় নির্বাচনে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে—তারা জয়ের জন্য মরিয়া। আর অ্যাটকিনসনের মতো তরুণরা সেই লড়াইয়ে নতুন উদ্যম এনে দিয়েছে।
এটাই টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য—একটি মুহূর্ত, একটি স্ন্যাপ উইকেট, একটা বাউন্সারেই পালটে যায় সব। আর এই উইকেটের গুরুত্ব ম্যাচ শেষেও বারবার আলোচনায় আসবে।
উৎস: